
আগামী ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে ডিসেম্বরের ১৬ অথবা ১৭ তারিখে এ বৈঠকটি হতে পারে। সেভাবেই দুই দেশের পররাষ্ট্র দপ্তর এগুচ্ছে। নানা কারণেই এই বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক।
মহল বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে সাম্প্রতিক সময়ে অস্বস্তিগুলো রয়েছে, কূটনীতিক মহল আশা করছেন সেগুলো শেখ হাসিনা-মোদির বৈঠকের মাধ্যমে দূর হবে। ভারতের বিহার নির্বাচনের আগে বিজেপির নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশবিরোধী নানা রকম বক্তব্য-বিবৃতি দিলেও নির্বাচনের পর তাদের এই অস্থিরতা আর দেখা যাচ্ছে না।
বরং ভারতের থিংকট্যাংকরা মনে করছেন, যে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি করা এখন অযৌক্তিক হবে। এটি ভারতের জনেই ক্ষতিকর হবে। আর এ কারণেই নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। যদিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের বেশ কিছু পদক্ষেপ এবং কাজে এক ধরণের হতাশা তৈরি হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘে মিয়ানমারের বিষয়ে যে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন হয়েছিল সে প্রস্তাবে ভোট দানে বিরত থেকেছিল। অথচ এর কিছুদিন আগেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশে এলে তিনি আশ্বস্থ করেন যে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা দের প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাশে থাকতে চায় ভারত। কিন্তু বাস্তবে ভারতের কথা এবং কাজের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আর এ কারণেই বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে এক ধরণের বিরক্তি তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয় হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশে এসেছিলেন একটি বার্তা নিয়ে- তা খুব পরিষ্কার। ভারত চাচ্ছিলেন যে বাংলাদেশে চীনের সঙ্গে যে বাণিজ্যিক নৈকট্য তা একটু শিথিল করতে। বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চল গুলোতে চীন যে সমস্ত প্রকল্পে অর্থায়ন করছে, সে অর্থায়নের ব্যাপারে ভারতের কিছু আপত্তি ছিল।
অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ, তিস্তার পানিসহ বিভিন্ন ইস্যুগুলো প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে দুই দেশের মধ্যে অস্বস্তির সবচেয়ে বড় যে বিষয় অনুচ্চারিত থেকে যাচ্ছে তা হলো ভারতে উগ্রবাদ চিন্তা-ভাবনা। যেটি বাংলাদেশের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি করছেন।
কূটনীতিক মহল মনে করছেন যে, ভারত বাংলাদেশের ব্যাপারে যতই চাপ সৃষ্টি করুক এবং দু`দেশের সম্পর্কের মধ্যে যতগুলো অস্থিরতা তৈরি হোক না কেন, ভারতের কূটনীতিক মহল এবং নীতি-নির্ধারকরা খুব ভালোভাবেই জানেন যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে শেখ হাসিনার গুরুত্ব।
শেখ হাসিনার কোন বিকল্প ভারতের কাছে নেই। শেখ হাসিনা আছেন জন্যই বাংলাদেশে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জায়গা পাচ্ছেনা। এখন যখন এই উপমহাদেশে চীনের এক ধরণের আধিপত্য তৈরি হচ্ছে সে সময়ে ভারতে নতুন করে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মাথাচাড়া দেওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আর এই অবস্থায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক কোনোভাবেই ভারত টানাপোড়েনে নিতে চায় না। কারণ বাংলাদেশই একমাত্র বন্ধু যারা ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোনোভাবেই আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং জায়গায় দেয়নি। আর তাই নরেন্দ্র মোদির এবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবেন বলেও মনে করছেন কূটনৈতিক মহল।